অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএনএম ওয়াসিম ফিরোজ জানান, ঘটনার সময় তিনি কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে তার সম্পৃক্তার প্রমাণ পাওয়ায় এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মুঞ্জুর করেন। অপারেশন ঈগল হান্ট’ পরিকল্পিত বা সাজানো কোন নাটক ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখতে আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।
জানা গেছে, আসাদুজ্জামান ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরেও নোয়াখালীর পুলিশ সুপার ছিলেন। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং সবশেষ নীরফামারী জেলায় পুলিশ ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ডেন্ট পদে ন্যস্ত করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল ওদুদ জানান, ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল গভীর রাতে পুলিশ, র্যাব, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও সোয়াট টিমের যৌথবাহিনী শিবগঞ্জের ত্রিমোহনী এলাকার মসলা ব্যবসায়ী ও কথিত জঙ্গি আবুল কালাম আজাদ ওরফে আবুর বাড়ি ঘেরাও করে গোলাগুলি করে। জঙ্গি নাটকের ঘটনা সৃষ্টি করে আবুকে হত্যা করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরে ২৭ এপ্রিল হেলিকপ্টারে আরও তিনটি বস্তাবন্দি মরদেহ বের করে ওই বাড়িতে নিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় তাদের পেটের মধ্যে বোমা বেঁধে রেখে রিমোট কন্ট্রোল দ্বারা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ঘটনার সাত বছর পর যড়যন্ত্রমূলক ও বানোয়াট জঙ্গি নাটক ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’ ঘটনায় পুলিশের সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হক, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও রাজশাহী রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেনসহ ১৮ জনকে আসামি করে নিহত আবু’র স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন বাদী হয়ে শিবগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর। এই মামলায় তৎকালীন কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের এডিসি আসাদুজ্জামানকে দুই দিনের রিমান্ড দেয় আদএদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন জানান, জঙ্গি মামলায় কোনোভাবে সাবেক পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জড়িত নন। তাকে অহেতুক এ মামলায় জড়ানো হচ্ছে।প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৬ শে এপ্রিল গভীর রাতে শিবগঞ্জের ত্রিমোহনীর শিবনগর গ্রামে হঠাৎ শতশত পুলিশ। প্রত্যন্ত গ্রামে অচেনা সাঁজোয়া যান, জলকামান, প্রজেক্টাইল, কাইনেটিভ আরও কতো কী। ভারী অস্ত্রে সজ্জিত পুলিশের একাধিক বিশেষ বাহিনী। রাত তখন প্রায় সাড়ে ১২ টা। মাত্র ১০ মিনিটে একটি বাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। আশপাশের রাস্তাঘাট সিলগালা করা হয়। মানুষের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। তখনো দুই শিশু সন্তন ও স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমিয়ে থাকা আবুল কালাম আজাদ ওরফে আবুর পরিবার কিছুই বুঝতে পারেনি। ঘুমিয়ে থাকা পরিবারটি কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাসার মূলফটকে তালা দেয় পুলিশ। চারিদিকে মুর্হুমুহু গুলি। সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দ। আতঙ্কে ওঠেন গ্রামবাসী। অজানা আতঙ্কে অনেকে এদিক ওদিক ছুটোছুটি শুরু করেন। পুলিশ আবুর ঘরের দরজা, জানালা, দেয়ালে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। সেদিন এক আবুকে মারতে ২ হাজার ১২৬ রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়। ওই অভিযানে অন্তত ১৭টি বিভিন্ন ধরনের গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়। অভিযানের নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’।