একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লিখছি। আজ আমার নৌবাহিনীর অফিসার ক্যাডেটের মেডিকেল টেস্টে এন্ড ভাইভা পরীক্ষা ছিল। প্রথমেই মেডিকেল টেস্ট পরীক্ষা হয়,তারপর ভাইভা পরীক্ষা হয়। একের পর এক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে যায় মেডিকেল টেস্টের জন্য, এরপর আমার পালা আসে, আমার উচ্চতা,বুকের মাপ,ব্লাড প্রেসার,চক্ষু দৃষ্টিসীমার পরীক্ষা নেয়,এরপর বর্ণান্ধতা পরীক্ষা দেওয়ার সময় আমাকে বলে “তুই শিবির নাকি,বাড়ি কই?”আমি বলি সাতকানিয়া।”তাহলে তুই শিবির করস, কি দায়িত্ব?”তারপর থেকে দেখলাম আমার প্রতি দায়িত্বরত আফিসারের অবহেলা।
বিগত আওয়ামী লীগের আমলে সাতকানিয়া-লোহাগাড়াকে ঢালাওভাবে জামাত-শিবির ট্রিট করে সরকারি চাকুরীসহ নানাক্ষেত্রে চরমভাবে নিগৃহীত হতে হতো। এখানের অধিবাসী হওয়া কী অপরাধ? এটা কি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বাইরে? এখনো কি সেই ধারা চলমান থাকবে! শেষে পুরা শরীর যখন চেক করে তখন আমার পেটে কিছু দাগ দেখেন তখন অফিসার আরেকজনকে বলেন ‘এগুলো ছিড়াগুলির দাগ’ অথচ এগুলো চিকেন পক্সের দাগ ছিলো।
কোনোভাবে মেডিকেল টেস্ট শেষ হলো। ভাইভাতে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়নি।ক্যান্ডিডেট শিবির কি নাহ ভাইভা তে হয়তো এভাবেই প্রশ্ন করে, চেক করে হয়তো, কাশ্মীর ইস্যুতে আপনি পাকিস্তানের পক্ষে নাকি ভারতের পক্ষে? জুলাই বিপ্লব নাকি মুক্তিযুদ্ধ? বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দল আপনার পছন্দ?
এমন অনেক প্রশ্ন।
জুলাই বিপ্লবে আমি অংশ নিয়েছি আমার এডমিশন এর প্রেসারের মধ্যেও। নতুন বাংলাদেশেও কী এখনো সেই পুরনো ফ্যাসিস্ট সিস্টেম থাকবে যে সিস্টেম ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার শপথেই তো আমরা আমাদের জীবনকে উপেক্ষা করে আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। আমাদের নতুন বাংলাদেশ এর স্বপ্ন কী অধরাই থেকে যাবে এভাবে?
আমার দাঁড়ি ক্লিনসেভ না থাকার কারনে উনারা শুরু থেকেই অন্যভাবে ট্রিট করে। নৌবাহিনীর মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাজনীতির সংশ্লিষ্টতা প্রমানের জন্য এভাবে প্রশ্নকরা কতটুকু ভ্যালিড বা এটাই নিয়ম কিনা আমার জানা নেই। তবে এমন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় এমন অবস্থায় খুবই অসহায় ও বিব্রতবোধ করছিলাম।
সাদিক কায়িমের সস্টটাসঃ
শাহবাগ কায়েমের মাধ্যমে হাসিনা জামায়াত এবং ছাত্রশিবির সংশ্লিষ্টদের মৌলিক অধিকার হরণ তো করেছিলো-ই, একই সাথে কেউ জামায়াত-ছাত্রশিবিরের প্রতি সমর্থন বা সমমনা চিন্তা করলে তাকেও ট্যাগিং এর মাধ্যমে যাবতীয় মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার সংস্কৃতি গড়ে তোলে।
কথা ছিলো খুনী হাসিনার পতনের পর এই ফ্যাসিজমের কবর রচিত হওয়ার। অথচ, ছাত্রশিবির সহ এদেশের অজস্র জনতার রক্তের উপর দাড়িয়ে ক্ষমতায় থাকা ইন্টেরিমের সময়েও একজন ব্যক্তিকে ‘ছাত্রশিবির’ ট্যাগিং করে বঞ্চিত করার অপচেষ্টা দৃশ্যমান।
প্রশ্ন হলো, যদি কারো যোগ্যতা থাকে, তবে সে ছাত্রশিবির করলেই বা কি? শুধুমাত্র ছাত্রশিবির সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে যদি কোনো যোগ্য ব্যক্তির প্রাপ্য অধিকার হরণের অপচেষ্টা হয়- হুশিয়ারি জানাচ্ছি, পরিণতি ভালো হবে না।